অসহায় রুগীর একমাত্র সহায় West Bengal Blood Source

 রক্তদান মহান দান, একজন একবার রক্ত দিয়ে বাচাতে পেরে চারটি প্রাণ। রক্ত মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও রক্ত এখনও পর্যন্ত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি এই উন্নত সমাজেও। তাই একজন ব্যক্তি রক্ত দান না করলে রক্ত পাওয়া কোনো ভাবে সম্ভব নয়। আরে কি ভাবছেন? ভাবছেনতো এত সব জানি তবে আবার লেখার কি আছে। আছে, আছে কারণ আছে...

 আমরা সবাই সব যেনেও এখোনো পর্যন্ত কতজন সচেতন? কতজন নিয়মিত রক্ত দান করি? 

অনেকে আর পড়বেন না এই ভেবে যে আবার রক্ত চাইবে অনেক জ্ঞান দেবে, আমার প্রয়োজন নেই এই বলে । 

কিন্তু এই সচেতনতা ও রক্তের অভাবে যাতে কোন রোগির মৃত্যু না হয় সেই দিকে নজর রেখে অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে চলেছে। আর সেই রকমি একটি সংগঠনের সাথে পরিচয় করা যাক। সংগঠনটি পুরো পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও কিছু মানবিক সেচ্ছাসেবী দের নিয়ে গঠিত হয়। গত দুই বছর ধরে এরা রাজ্যের ভিন্ন হাসপাতালে অসহায় মানুষের সেবা করে এসেছে রক্ত যোগান দিয়ে। সেই সংগঠনটির নাম "West Bengal Blood Source"। এরা এতোদিনে প্রায় ৬০০ জনের বেশী মানুষের পাশে থেকেছেন। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিনে রক্ত দান শিবিরের আয়োজন ও করেছেন রাজ্যের বিভিন্ন যায়গায়। 

এই সংগঠনের বিশেষ ভূমিকা পালন করেন দেবাশীষ দাস ও অসীম দে, এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেচ্ছাসেবীরা। তাদের মতে 'এখনো পর্যন্ত একজন রক্ত দাতা জোগাড় করতে তাদের প্রত্যেকের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। এখনো সচেতনতার অভাব। একজনকে রক্ত দিতে বলে তারা নানা অজুহাতে দিয়ে চলে যান, কিন্তু তাদের রক্ত দরকার পরলে আমাদের কাছে এসেই বলে। আচ্ছা বলুনতো আমার কোথায় পাবো আপনার যদি দান না করেন, এগিয়ে না আসেন। ' 

West Bengal Blood Source এই সংগঠনটি  WhatsApp ও Facebook Group এর মাধ্যমে চালানো হয়। এখানে কারোর রক্তের প্রয়োজন হলে বা কেউ রক্ত দান করতে চাইলে যোগাযোগ করেন। সংগঠনের সেচ্ছাসেবী দের মতে তার মানুষকে রক্ত দান সম্পর্কে সচেতন করে চলবেন। তারা বলেন অনেকে আগের থেকে অনেক সচেতন হয়েছেন, অনেকেই এগিয়ে আছেন সেচ্ছায় রক্ত দান করতে।

রক্তদান সম্পর্কে কিছু তথ্য :

আজ আমরা রক্তদাতা দের নিয়মাবলী জেনে নি-

❌১. বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হলে রক্তদান করা যায় না.

❌২. ওজন ৪৫ কিলোগ্রামের কম হলে রক্তদান করা যায় না.

❌৩. হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫ গ্রাম/ ডেলি র কম হলে বা অ্যানিমিয়া/ রক্তাল্পতার লক্ষন থাকলে রক্তদান করা যায় না.

❌৪. অতি উচ্চচাপ বা কম রক্তচাপ থাকলে রক্তদান করা যায় না.

❌৫. নিয়মিত বা রক্তদানের দিন কোনো ঔষধ গ্রহন করলে তা স্বাস্থ্য পরীক্ষাকারী চিকিৎসককে অবশ্যই জানান এবং তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী রক্তদান করুন বা রক্তদান থেকে বিরত থাকুন.

❌৬. নিয়মিত মদ্যপান করলে অথবা কোনোরূপ বেশী ক্ষতিকর নেশা (ড্রাগস টাইপ) থাকলে রক্তদানে বিরত থাকুন.

❌৭. মহিলাদের ঋতু চলাকালীন ও গর্ভবতী অবস্থায় রক্তদানে বিরত থাকাই উচিৎ.

❌৮. ৩ বছরের মধ্যে জন্ডিস হলে পরীক্ষক চিকিৎসককে অবশ্যই জানাবেন.

❌৯. ৬ মাসের মধ্যে বড় অস্ত্রপচার হলে রক্তদানে বিরত থাকুন.

❌১০. ৩ (পুরুষ )  / ৪ (মহিলা ) মাসের  মধ্যে দ্বিতীয় বার রক্তদান করবেন না.


রোগীর জীবন ও রক্তদাতার জীবন- উভয়ই মূল্যবান. তাই চিকিৎসকের কাছে কিছুই গোপন করবেন না.


রক্ত দেয়ার উপকারিতা:

দেশের বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নিয়মিত রক্ত দেয়ার কিছু উপকার রয়েছে. সেগুলো হলো:


🔴১. এতে একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব.

🔴২. নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে.

🔴৩. বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়. এতে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে. দ্রুত রক্ত স্বল্পতা পূরণ হয়.

🔴৪. রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে. ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়.

🔴৫. রক্ত দিলে যে ক্যালোরি খরচ হয়, তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে.

🔴৬. শরীরে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি বা এইডসের মতো বড় কোন রোগ আছে কি না, সেটি বিনা খরচে জানা যায়.

🔴৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে.

🔴৮. রক্তদাতার যদি নিজের কখনো রক্তের প্রয়োজন হয় তাহলে ব্লাড ব্যাংকগুলো তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়.

🔴৯. রক্তদানের ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়.

🔴১০. ১ ইউনিট রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না.

সুতরাং কোনো ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এই মহান কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সড়িয়ে রাখবেন না. নিজে রক্ত দিন এবং আপনার পরিচত ব্যাক্তিদেরও রক্তদানে উৎসাহিত করুন.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Comment