রাতের আকাশে অগণিত তারারা টিমটিম করে জ্বলছে। শীতল হাওয়ায় নদীর পানির মৃদু শব্দ, শহরের কোলাহল থেকে দূরে নদীর পাড়ের এই নিরিবিলি জায়গাটা আকাশময় ভালোবাসার এক ছোঁয়া এনে দেয়। তমাল এখানে বসে গভীরভাবে ভাবছিল। বহু বছর পর এই শহরে ফিরে এসেছে সে, যেখানে তার জীবনের সব থেকে সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটিয়েছিল। এই জায়গাটা তার কাছে কেবল স্মৃতির গর্ভেই নয়, বরং হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার সাক্ষী।
তরীর সাথে তমালের প্রথম দেখা এই নদীর ধারে। স্কুলের শেষ বছর, দুই বন্ধুর মাঝে গড়ে উঠেছিল গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর; তমালের পড়াশোনার জন্য তাকে কলকাতায় যেতে হয়েছিল। সেই বিদায় ছিল তাদের প্রেমের প্রথম এবং শেষ বিদায়। তার পর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর, কোনো যোগাযোগ ছিল না।
আজ তমাল আবার নদীর পাড়ে বসে আছে, হৃদয়ে পুরনো সেই মুহূর্তগুলোর স্মৃতি। হঠাৎ করে পেছন থেকে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে সে চমকে উঠে। "তমাল?"
তমাল ঘুরে দেখে তরী দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে অবিশ্বাসের ছায়া। সেই চেনা হাসি, সেই চেনা চোখ, এতগুলো বছর পরও যেন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের দু'জনের মাঝে কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর তরী এগিয়ে এসে বলে, "এত বছর পরও তুমি এখানে?"
তমালের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। "হ্যাঁ, ফিরে এসেছি। তবে জানতাম না তুমি এখানে থাকবে।"
তরী হেসে বলে, "এই জায়গাটা তো আমাদের। আমি এখানে আসি তোমার স্মৃতিগুলো বাঁচিয়ে রাখতে।"
তমালের চোখে জল এসে যায়। এই মুহূর্তে দু'জনের মনে জমে থাকা সমস্ত কথাগুলো মুখ ফুটে বের হতে চায়, কিন্তু কোনো কথাই যেন যথেষ্ট নয়। ভালোবাসা মাঝে মাঝে কথা ছাড়াই নিজের পথ খুঁজে নেয়।
সেই রাতে, তারাদের আলো আর নদীর ঢেউয়ের সাথে মিশে গেল তাদের দু'জনের দীর্ঘশ্বাস। পুরনো সেই ভালোবাসা আবার নতুন করে পথ খুঁজে পেল।
তারা বুঝে গেল, প্রকৃত ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, সময়ের পরেও সেটা বেঁচে থাকে, অপেক্ষায় থাকে আবার ফিরে আসার।
1 মন্তব্যসমূহ
Valo laglo
উত্তরমুছুনComment