প্রথম রাতের ঘটনার পর থেকে আমি ঠিক করেছিলাম, যখনই সময় পাব, শহরের অচেনা গলিগুলো ঘুরে দেখব। হয়তো সত্যিই সেই সাধুর কথার মতো, প্রতিটি ইটের ভেতরে লুকিয়ে আছে গল্প।
রহস্যময় নিমতলা শ্মশানঘাট
এক শীতের রাতে আমি গেলাম নিমতলা শ্মশানঘাটে। চারিদিকে কুয়াশা, বাতাসে ধূপ-ধুনোর গন্ধ, আর মাঝে মাঝে ভেসে আসছে শঙ্খের আওয়াজ। একটা পুরনো চিতার কাছে দাঁড়িয়েই হঠাৎ শুনলাম মৃদু হাসির শব্দ। তাকিয়ে দেখি সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু লোকটা বলল,
“ভয় পেও না। আমি এই শ্মশানেরই আত্মা। জানো, এখানে একসময় গোপন সুড়ঙ্গ ছিল, যা নাকি সরাসরি শোভাবাজার রাজবাড়ির সঙ্গে যুক্ত। সেই সুড়ঙ্গ দিয়েই অনেক বিপ্লবী রাতের আঁধারে বেরিয়ে যেতেন।”
আমি স্তম্ভিত। যদি সত্যিই এমন সুড়ঙ্গ থেকে থাকে, তবে তার ইতিহাস কী বিপুল হতে পারে!
গোপন সুড়ঙ্গের প্রবেশদ্বার
লোকটা আমাকে একটা ভাঙাচোরা দেওয়ালের দিকে ইশারা করল। কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গিয়ে হাত বোলাতেই হঠাৎ দেওয়ালের ইট নড়ল। ভেতরে অন্ধকার সুড়ঙ্গ! টর্চ জ্বালিয়ে ঢুকে পড়লাম।
সুড়ঙ্গটা সরু, স্যাঁতস্যাঁতে আর অদ্ভুত গন্ধে ভরা। দেয়ালের গায়ে কোথাও কোথাও খোদাই করা তলোয়ার, সূর্য আর পদ্মফুলের চিহ্ন। মনে হচ্ছিল, বিপ্লবীরা এখানে গোপন বৈঠক করতেন।
হঠাৎ শুনলাম পদশব্দ! আলো নেভালাম। দেখলাম—কিছু ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তাদের হাতে মশাল, আর কণ্ঠে উচ্চারণ—
“বন্দে মাতরম!”
আমি বুঝলাম—আমি আবারও সময় ভ্রমণ করে ফেলেছি। এবার ১৯০৫ সাল, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়কাল।
বিপ্লবীদের গোপন সভা
আমি দূর থেকে তাকিয়ে রইলাম। এক তরুণ বিপ্লবী বলছিলেন,
“এই সুড়ঙ্গ দিয়ে আমরা ব্রিটিশ পুলিশের চোখ ফাঁকি দেব। এই শহর একদিন স্বাধীন হবেই।”
আমার বুক কেঁপে উঠল। ভাবতে পারছিলাম না, আমি আসলে অতীতের এক মহামুহূর্তের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এরপর হঠাৎ সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। চোখ খুলে দেখি, আমি আবার বর্তমানের নিমতলা ঘাটেই দাঁড়িয়ে আছি। সুড়ঙ্গের দেয়াল বন্ধ হয়ে গেছে, যেন কখনো কিছু ছিলই না।
ডায়েরির দ্বিতীয় খণ্ড
ঘরে ফিরে এসে দেখি টেবিলের উপর আবার সেই ডায়েরি। এবার নতুন লাইন লেখা—
“সময় ভ্রমণকারীর ডায়েরি, দ্বিতীয় খণ্ড — বিপ্লবীদের সুড়ঙ্গ”
💡 এবার আমার প্রশ্ন, পাঠক—
তুমি কি বিশ্বাস করো, সত্যিই কলকাতার গলিগুলোতে এখনো সেই গোপন সুড়ঙ্গ লুকিয়ে আছে?
নাকি সবটাই আমার কল্পনা?
👉 এই রহস্য এখানেই শেষ নয়।
পরের অধ্যায়ে আমি লিখব "দলদলিয়ার ভূত আর লুকানো ধনভাণ্ডারের গল্প"।
0 মন্তব্যসমূহ
Comment